Saturday, January 23, 2021

ডায়াবেটিসও একটি মহামারি রোগ

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বেশি ক্ষুধা অনুভূত হওয়া, পানি পিপাসা লাগা, ঠিকমতো পরিশ্রম করতে না পারা, কোনো একটি ক্ষত বা ইনফেকশন ভালো না হওয়া, দীর্ঘদিন ধরে কাশি ভালো না হওয়া, মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের ইনফেকশন ভালো না হওয়া, বন্ধ্যত্ব ইত্যািদ ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা কখনোই পুরোপুরি নিরাময় হয় না, কিন্তু সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি একটি মহামারি রোগ।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা কখনোই পুরোপুরি নিরাময় হয় না, কিন্তু সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি একটি মহামারি রোগ। বাংলাদেশের এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে অন্তত একজন ডায়াবেটিসের রোগী নেই। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। সঠিক তথ্য ও সচেতনতার অভাবে দিন দিন লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে এর হার।

আর করোনা মহামারিতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা রয়েছেন উচ্চ ঝুঁকিতে। এই সময়ে তাঁদের কী করণীয়, তা নিয়ে আলোচনা হলো ‘ডিজিটাল হসপিটাল লাইভ: হ্যালো ডক্টর’-এর দ্বিতীয় পর্বে।

ডা. শ্রাবণ্য তৌহিদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ডিজিটাল হেলথ কেয়ার সলিউশনসের ক্লিনিক্যাল কনসালট্যান্ট ডা. জয়ন্ত পাল চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি ১৭ ডিসেম্বর প্রথম আলো ও ডিজিটাল হসপিটালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

প্রথমেই ডা. জয়ন্ত পাল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা বাড়লেও অনেক মানুষই বুঝতে পারেন না যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত।’ এ রোগের কিছু লক্ষণ আছে, যেমন: ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বেশি ক্ষুধা অনুভূত হওয়া, পানি পিপাসা লাগা, ঠিকমতো পরিশ্রম করতে না পারা, কোনো একটি ক্ষত বা ইনফেকশন ভালো না হওয়া, দীর্ঘদিন ধরে কাশি ভালো না হওয়া, মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের ইনফেকশন ভালো না হওয়া, বন্ধ্যত্ব—এ ধরনের লক্ষণ থাকলেই সবার উচিত হবে ডায়াবেটিস টেস্ট করা।

ডায়াবেটিস টেস্ট করা হয় ওজিটিটির মাধ্যমে। এই টেস্টের প্রথমে সকালবেলা খালি পেটে রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এরপর চিনিমিশ্রিত পানি পান করিয়ে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে আবার নমুনা সংগ্রহ করা হবে। আর যেসব রোগী কর্মব্যস্ততা বা অন্য কোনো কারণে সকালে সময় পান না, তাঁদের জন্য আছে এইচবিএওয়ানসি এবং আরবিএস টেস্ট। খালি পেটে ৬ এবং ভরা পেটে ৮ হলো গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা।

আবার অনেকের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। বিশেষ করে টাইপ–টু ডায়াবেটিসের বেলায়। তাই ডা. জয়ন্ত পাল চৌধুরী পরামর্শ দেন, ৪০ বছর বয়স হলে, ওজন বেশি থাকলে অর্থাৎ বিএমআই যাঁদের ২৩–এর বেশি, যাঁরা কম পরিশ্রম করেন, টেনশন বা স্ট্রেস যাঁদের বেশি, যদি পরিবারে কারও ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে, তাহলে অবশ্যই বছরে একবার টেস্ট করাতে হবে। ইদানীং ৪০ বছরের কম বয়সীদের ডায়াবেটিস দেখা যাচ্ছে। কারণ, দেশে তরুণদের ভেতর ফাস্ট ফুড–জাতীয় খাবারের জনপ্রিয়তা বেশি এবং তাদের পরিশ্রম না করার প্রবণতা বেশি। রাত জাগা এবং ধূমপানের জন্য ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। যাদের এই অভ্যাস আছে, তাদেরও অন্তত একবার ডায়াবেটিস টেস্ট করা উচিত।

‘ইমপেয়ারড গ্লুকোজ টলারেন্স’ বলে মেডিকেল একটি টার্ম আছে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছে, তবে এতটাও বাড়েনি যে তাকে ডায়াবেটিস বলতে হবে। এ ধরনের মানুষের সংখ্যাও আমাদের দেশে অনেক। ডা. জয়ন্ত পাল চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের মানুষ যদি আমরা এখনই শনাক্ত করতে পারি, তাহলে তাদের ডায়াবেটিসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা সহজ হবে।’ এ জন্য সবাইকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

ডা. জয়ন্ত পাল চৌধুরী বলেন, ডায়াবেটিস চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখা। খাদ্যাভ্যাসে কার্বোহাইড্রেট–জাতীয় খাবারের আধিক্য থাকায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকিটা বেশি। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে বেশি করে মাছ, মাংস, ডাল, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এমন সবজি ও বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. জয়ন্ত পাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তিন বেলা না খেয়ে ছয় বেলা খেতে হবে। এর ভেতর প্রধান মিল পরিমিত পরিমাণে খেয়ে এর মাঝখানে হালকা নাশতা খেতে হবে। আর রাতের খাবার আটটার আগেই খেয়ে ফেলতে হবে।’

ডায়াবেটিক রোগীদের ভিটামিন সি–যুক্ত টকজাতীয় ফল খাওয়া উচিত। করোনার এ সময়ে এ ধরনের ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ। অন্যান্য সময়ে এই ফলের পাশাপাশি মৌসুমি মিষ্টি ফলগুলোও খাওয়া যাবে, তবে পরিমিত পরিমাণে।

করোনার এই সময়ে ডায়াবেটিসের যেসব রোগীর সামর্থ্য আছে, তাঁরা বাইরে হাঁটতে পারবেন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে। তবে সবার উচিত প্রতিদিনই হাঁটা। আগে বলা হতো ভোরবেলা হাঁটা ভালো। তবে এখন খালি পেটে না খেয়ে ভোরবেলায় হাঁটা সমর্থন করা হয় না। এর সঙ্গে হার্ট স্ট্রোকের একটি ঝুঁকির কথা শোনা যাচ্ছে। সকালবেলা নাশতা খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে বা সন্ধ্যাবেলায় হাঁটা বা ব্যায়াম করা যেতে পারে। এ সময় ঘরের ভেতরও হাঁটাচলা করা যায়। যাদের অস্টিওআরথ্রাইটিস আছে, তাঁরা বাসায় বসে স্ট্রেস ব্যায়াম করতে পারেন।

করোনার সময়ে যেহেতু চাইলেই বাইরে বের হওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু ডায়াবেটিসের রোগীদের বাসায় একটি নিজস্ব গ্লুকোমিটার রাখার পরামর্শ দেন ডা. জয়ন্ত পাল চৌধুরী। এভাবে নিজের গ্লুকোজের পরিমাণ জেনে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন তিনি। যেসব রোগীর কোভিড হয়েছে, তাদের গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকলে ইনসুলিন নেওয়া যেতে পারে। এ সময় ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া, এক ঘণ্টা পরপর হাঁটাহাঁটি করা, নিয়ম করে পানি পান এবং সন্ধ্যায় বাসার ভেতর ৩০ মিনিট বা এক ঘণ্টা হাঁটার প্রতি জোর দিতে হবে।

এ সময়ে ঘরে কেউ অসুস্থ হলে ডায়াবেটিসের রোগীদের উচিত হবে তাদের থেকে দূরে থাকা বা স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে চলে যাওয়া। নিয়মিত গারগল করা এবং হাঁটাচলার সময় কোনোভাবে ব্যথা না পায় বা ক্ষত না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এর পাশাপাশি অন্যান্য রোগ থেকে থাকলে তার চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে। আর স্ট্রেস কমানোর জন্য যেকোনো চিত্তবিনোদনের মাধ্যম ব্যবহার করার কথা বলেন ডা. জয়ন্ত পাল চৌধুরী।

ডায়াবেটিসের রোগীদের শ্বাসকষ্ট হলে তাঁরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না। এ জন্য করোনার সময়ে তাঁদের উচিত হবে প্রতিটি লক্ষণকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া এবং লক্ষণ দেখা দেওয়ার তিন থেকে চার দিনের ভেতর টেস্ট করা। এর ভেতর সুগার লেভেল বেশি থাকলে দ্রুত তা কমানোর চেষ্টা করতে হবে।

করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিসের রোগীদের গুরুতর কারণে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আগে থেকেই আশপাশে হাসপাতাল ও যোগাযোগব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে রাখতে হবে।

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home