Friday, January 22, 2021

পুরুষও ‘বন্ধ্যা’ হতে পারে

 বন্ধ্যাত্ব শরীরের প্রজননগত অসুখ। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক নারী-পুরুষ এই জটিল সমস্যায় আক্রান্ত। কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারেন না এ অবস্থায় কী করণীয় বা কার কাছে গেলে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যাবে। এ নিয়েই আলোচনা হলো সাপ্তাহিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ডিজিটাল হসপিটাল লাইভ: হ্যালো ডক্টর’-এর পঞ্চম পর্বে।

ডা. শ্রাবন্য তৌহিদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসি। অনুষ্ঠানটি গত ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলো ও ডিজিটাল হসপিটালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এক বছর ধরে যদি কোনো দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করেও সন্তান ধারণ করতে না পারেন, তখন এই অবস্থাকে বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। বন্ধ্যাত্ব নারী ও পুরুষ উভয়ের হতে পারে। একজন দম্পতি নানা কারণে এ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ডা. মুনিরা ফেরদৌসি বলেন, যখন কোনো দম্পতি এই সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান, তখন সবার আগে তাঁদের ইতিহাস জানা হয়।

বিস্তারিত ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নারীদের ক্ষেত্রে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে। তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখা হয় নিয়মিত মাসিক হচ্ছে কি না। কারণ, এটি ঠিকমতো হলে ওভ্যুলেশনও ঠিকমতো হয়। এরপর দেখা হয় জরায়ুতে কোনো সমস্যা আছে কি না। জরায়ুতে কনজেনিটাল সমস্যা থাকতে পারে। যেমন অস্বাভাবিক আকৃতি, দুটি জরায়ু, জরায়ুতে দুটি ভাগ বা টিউমার প্রভৃতি। টিউবাল ফ্যাক্টর ও জরায়ু মুখের সমস্যা থাকলেও বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

আবার পুরুষের ক্ষেত্রে সবার আগে বীর্যের মান বা স্পার্ম কাউন্ট করা হয়। যদি এসবে কোনো ধরনের সমস্যা না থাকে, তাহলে পরবর্তী ধাপে অন্যান্য ইনভেসটিগেশন করা হয় বলে জানান ডা. মুনিরা ফেরদৌসি।

নারীদের এই সমস্যা নির্ণয়ের জন্য অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু পুরুষের মাত্র একটি পরীক্ষা করলেই হয়ে যায়। এ জন্য ডা. মুনিরা ফেরদৌসির পরামর্শ, সবার আগে স্বামীর বীর্য পরীক্ষা করা। এতে যদি তাঁর সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে অনেক টাকা খরচ করে স্ত্রীর পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে না।

নারীদের আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং টিউবের হিস্টেরোসালপিঙ্গোগ্রাফি করার পাশাপাশি হরমোন ও ডায়াবেটিস টেস্ট করা হয়। এই পরীক্ষাগুলোর ফলাফল অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হয়। তবে ডা. মুনিরা ফেরদৌসি বলেন, চিকিৎসা শুরু করার আগে কাউন্সেলিং অনেক বেশি জরুরি। কারণ, বাচ্চা না হওয়ার কারণে অনেক নারী স্ট্রেসের ভেতর থাকেন। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেসের জন্য কনসিভ করতে দেরি হয়। এরপর ওষুধ যেমন ওভ্যুলেশন ইন্ডুসার ড্রাগ দেওয়া হয়। ওষুধ গ্রহণের পর নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে। কারণ, এ ধরনের ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়া যাবে না।

অনুষ্ঠানে আইইউআই নিয়েও আলোচনা করা হয়। ইন্ট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন বা আইইউআই সাধারণত পুরুষের বীর্যে সমস্যা থাকলে বা নারীর অনেক বেশি ডিসচার্জ হলে করানো হয়। এই পদ্ধতিতে স্বামীর বীর্য নিয়ে সেটি শোধন করে ওভ্যুলেশনের সময় একটি টিউবের মাধ্যমে জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। এর পাশাপাশি সন্তান ধারণের আরেকটি কৃত্রিম পদ্ধতি হলো ‘টেস্টটিউব বেবি’ বা আইভিএফ। স্বামীর বীর্যের সমস্যা বা স্ত্রীর ওভ্যুলেশন ঠিকমতো না হলে বা বয়স বেশি হলে আইভিএফ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর আগে জরায়ুর দেয়াল ঠিক করতে এবং ডিম্বাণু যাতে ভালোভাবে এসে সেখানে বসে, সে জন্য ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর সেই ডিম্বাণু এবং স্বামীর শুক্রাণু নিয়ে ল্যাবে ফারটিলাইজ করানো হয়। এরপর এই ফারটিলাইজড ডিম্বাণুটি জরায়ুতে স্থাপন করা হয়।

ডা. মুনিরা ফেরদৌসি বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বলেন, ‘আমরা বন্ধ্যাত্ব শব্দটি বলতে নারাজ। এর চেয়ে সাবফারটাইল বা কম উর্বর বলা যেতে পারে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে বাচ্চা না হওয়ার জন্য শুধু মেয়েদের দায়ী করা হয়। এ জন্য তাদের অনেক মানসিক অশান্তির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে যদি মেয়ের বাচ্চা না হয়, তাহলে ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের কারণেও বাচ্চা হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুজনই দায়ী থাকতে পারে। আবার কারও কোনো সমস্যা না থাকলেও বাচ্চা না হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। তাই শুধু শুধু কোনো মেয়েকে দোষারোপ করা যাবে না। তাকে বলাই যাবে না, তুমিই দায়ী। এতে তার যে স্ট্রেস হয়, তাতেও ওভ্যুলেশন হয় না।’ এ জন্য কোনো মেয়েকে অযথা এ ধরনের কথা না বলে তাঁকে সাহায্য করতে হবে

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home